১০:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

মৃত্যুর পর মানুষের নয় আফসোস

পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা মানুষের হেদায়াতের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা রেখেছেন। রেখেছেন সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার উপায় ও উপকরণ। শান্তি ও কামিয়াবির পথের পথিক হয়ে জীবনযাপন করার জন্য পবিত্র কোরআনে রয়েছে বিশদ বর্ণনা। সফল ব্যক্তিদের পরিচিতি ও তাদের শান্তিময় জীবন উপভোগের যেমন বর্ণনা আছে কোরআনে তেমনি দুনিয়া ও আখেরাতে ব্যর্থ ব্যক্তিদের বর্ণনাও আছে। আজকের আলোচনায় আল্লাহর বান্দা হিসেবে ব্যর্থ ব্যক্তিদের কোরআনে বর্ণিত ৯টি আফসোস নিয়ে কথা বলব। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে এ আফসোসের জিন্দেগি থেকে মুক্তি দান করুন- আমিন। ৯টি আফসোস কী? কারা এই হতভাগা! তাদের পরিচয় ও হতাশাসূচক বাক্যগুলো নিচে পেশ করা হলো-

০১. ‘হায়! আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম।’ (সুরা নাবা : ৪০)।

নিশ্চয় আমি তোমাদের আসন্ন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করলাম; [১] সেদিন (হাশরে) মানুষ তার কৃতকর্ম প্রত্যক্ষ করবে [২] এবং অবিশ্বাসী বলবে, হায় আফসোস! যদি আমি মাটি হয়ে যেতাম। [৩] [১] অর্থাৎ, কেয়ামতের দিবসের আজাব সম্পর্কে এ কথা, যা অতি নিকটেই। কেন না, তার আগমন সুনিশ্চিত সত্য। আর প্রতিটি জিনিস যা আসবে তা অতি নিকটেই। যেহেতু যে কোন প্রকারে তা আসবেই আসবে। [২] অর্থাৎ, ভালো ও মন্দ যে আমলই সে পার্থিব জীবনে করেছে, তা আল্লাহর কাছে পৌঁছে গেছে। কেয়ামতের দিন তা তার সামনে এসে যাবে এবং সে তা স্বচক্ষে দেখতে পাবে। ‘তারা তাদের কৃতকর্ম সম্মুখে উপস্থিত পাবে।’ (সুরা কাহ্ফ : ৪৯)। সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে যে, সে কী সামনে (আখেরাতের জন্য) পাঠিয়েছে ও কী পেছনে (দুনিয়ায়) রেখে গেছে।’ (সুরা ক্বিয়ামাহ : ১৩) [৩] অর্থাৎ, যখন সে নিজের ভয়ঙ্কর আজাব দেখে নেবে, তখন সে এই আকাঙ্ক্ষা করবে। কোনো কোনো আলেম বলেন, আল্লাহতায়ালা পশুদের মাঝেও ন্যায়পরায়ণতা ও সুবিচারের সঙ্গে ফায়সালা করবেন। এমনকি যদি কোন শিংবিশিষ্ট পশু কোনো শিংবিহীন পশুর প্রতি অত্যাচার করে থাকে, তাহলে তারও বদলা দেওয়া হবে। তারপর আল্লাহ পশুদের বলবেন, তোমরা মাটিতে পরিণত হও। তখন তারা মাটি হয়ে যাবে। আর সেই সময় কাফেররাও বাসনা করবে যে, তারাও যদি পশু হতো এবং তাদের মত আজ মাটি হয়ে যেতে পারত! (তাফসির ইবনে কাসির)।

০২ ‘হায়! যদি পরকালের জন্য কিছু করতাম।’ (সুরা ফাজর : ২৪)।

সে বলবে, ‘হায়! আমার এ জীবনের জন্য আমি যদি কিছু অগ্রিম পাঠাতাম!’ এই বলে আফসোস ও আক্ষেপ করা লজ্জা ও লাঞ্ছনারই অংশবিশেষ। কিন্তু সেদিন তা কোনো উপকারে আসবে না।

০৩ ‘হায়! আমাকে যদি আমার আমলনামা না দেওয়া। হতো।’ (সুরা আল-হাক্কা : ২৫)।

কিন্তু যার আমলনামা তার বাম হাতে দেওয়া হবে, সে বলবে, ‘হায়! আমাকে যদি দেওয়াই না হত আমার আমলনামা। কেন না, আমল-নামা বাম হাতে পাওয়াই হবে দুর্ভাগ্যের লক্ষণ। বদকার, পাপিষ্ঠ লোক কেয়ামতের দিন বামহাতে আমলনামা পাবে। তখন তারা আফসোস করে এ কথা বলবে, ‘হায়! আমাকে যদি আমার আমলনামা না দেওয়া। হতো।’ (সুরা আল-হাক্কা : ২৫)।

০৪ ‘হায়! আমি যদি ওকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম।’ (সুরা ফুরকান : ২৮)।

হায় দুর্ভোগ আমার! আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। এখান হতে জানা যায় যে, যারা আল্লাহর অবাধ্য তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব রাখা ঠিক নয়। কারণ, মানুষ সৎ সঙ্গে ভালো ও অসৎ সঙ্গে খারাপ হয়ে যায়। বেশির ভাগ লোকদের পথভ্রষ্ট হওয়ার কারণ অসৎ বন্ধু ও খারাপ সংগীদের সঙ্গে উঠা বসা। সেই জন্য হাদিসে সৎ সঙ্গী গ্রহণ এবং অসৎ সঙ্গী বর্জন করার ব্যাপারকে (আতর-ওয়ালা ও কামারের সঙ্গে) উদাহরণ দিয়ে স্পষ্ট করা হয়েছে। (মুসলিম শরিফ : নেকি ও জ্ঞাতি বন্ধন অধ্যায়)।

০৫ ‘হায়! আমরা যদি আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর আনুগত্য করতাম।’ (সুরা আহযাব, আয়াত : ৬৬)।

যেদিন অগ্নিতে ওদের মুখমন্ডল উল্টেপাল্টে দগ্ধ করা হবে, সেদিন ওরা বলবে, ‘হায়! আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম ও রাসুলকে মান্য করতাম!’ কেয়ামতের দিন এ কথা সেসব লোক বলবে, যারা কোরআন ও সুন্নাহ ছেড়ে অন্য পথ বা মত আঁকড়ে ধরে জীবন যাপন করেছে দুনিয়ার বুকে। যারা আল্লাহর রাসুল (সা.) কে যথার্থভাবে অনুসরণ করতে পারেনি এবং আল্লাহর বিধান অমান্য করে তুচ্ছ স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দুনিয়ার হায়াত কাটিয়েছে জীবন ও মরণের রহস্য ভুলে।

০৬ ‘হায়! আমি যদি রাসুল (সা.) এর পথ অবলম্বন করতাম।’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ২৭)।

সীমালংঘনকারী সেদিন নিজ হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, ‘হায়! আমি যদি রাসুলের সঙ্গে সৎপথ অবলম্বন করতাম। অর্থাৎ দুনিয়া ও আখেরাতে প্রকৃত শান্তির পথ মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রদর্শিত পথ- এ পথ ছেড়ে যারা নিজের খেয়ালখুশি মতো চলে মৃত্যুবরণ করবে, তারা আখেরাতে আফসোস করবে। কেন রাসুল (সা.) কে অনুসরণ করল না! তাহলে তো আজ আর লাঞ্ছিত হত না।

০৭ ‘হায়! আমিও যদি তাদের সঙ্গে থাকতাম, তা হলে বিরাট সফলতা লাভ করতে পারতাম।’ (সুরা আন-নিসা: ৭৩)।

আর যদি তোমাদের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ হয়, তাহলে সে অবশ্যই বলবে, ‘হায়! যদি আমি তাদের সঙ্গে থাকতাম, তাহলে আমিও বিরাট সাফল্য লাভ করতাম।’ যেন তোমাদের ও তার মধ্যে কোনো সদ্ভাবই ছিল না। অর্থাৎ, জিহাদে বিজয় এবং গনীমতের মালের অংশ পাওয়া যেত, যা দুনিয়াদার মানুষের মূল লক্ষ্য। অর্থাৎ, যেন সে তোমাদের ধর্মাবলম্বিদের কেউ নয়; বরং সে যেন অপরিচিত পর কেউ।

০৮ ‘হায়! আমি যদি আমার রবের সঙ্গে কাউকে শরিক না করতাম।’ (সুরা কাহফ, আয়াত : ৪২)।

তার ফল-সম্পদ পরিবেষ্টিত হয়ে গেল এবং সে তাতে যা ব্যয় করেছিল, তার জন্য হাত কচলিয়ে আক্ষেপ করতে লাগল; যখন তা মাচানসহ পড়ে গেল। সে বলতে লাগল, ‘হায়! আমি যদি কাউকেও আমার প্রতিপালকের শরিক না করতাম।’ এটা হলো ধ্বংস ও বিনাশেরই আভাস। অর্থাৎ, তার পুরো বাগানটাই ধ্বংস করে দেওয়া হলো। বাগান প্রস্তুত ও সংস্কারের কাজে এবং চাষাবাদে যে অর্থ সে ব্যয় করেছিল, তার জন্য আক্ষেপের হাত কচলাতে লাগল। হাত কচলানোর অর্থ, অনুতপ্ত হওয়া।

অর্থাৎ, যে মাচান ও ছাদণ্ডছপ্পরের ওপর আঙুরের লতা রাখা ছিল, সেগুলো সব জমিনে পড়ে গেল এবং আঙুরের সব ফসল ধ্বংস হয়ে গেল। এখন সে অনুভব করতে পেরেছে যে, আল্লাহর সাথে কাউকে অংশী স্থাপন করা, তার যাবতীয় নেয়ামত দ্বারা প্রতিপালিত ও উপকৃত হয়ে তার বিধি-বিধানকে অস্বীকার করা ও তার অবাধ্যতা করা কোনোভাবেই কোনো মানুষের জন্য উচিত নয়। তবে এখন আক্ষেপ ও অনুতাপ কোনো ফল দেবে না। ধ্বংসের পর আফসোস করলে আর কী হবে?

০৯. ‘হায়! এমন যদি কোনো সুরত হতো- আমাদের আবার দুনিয়াতে পাঠানো হতো, আমরা আমাদের প্রভুকে মিথ্যা প্রতিপন্ন না করতাম আর আমরা হতাম ঈমানদারদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ২৭)।

তুমি যদি দেখতে পেতে যখন তাদের দোজখের পাশে দাঁড় করানো হবে এবং তারা বলবে, ‘হায়! যদি আমাদের (পৃথিবীতে) প্রত্যাবর্তন ঘটত, তাহলে আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনকে মিথ্যা বলতাম না এবং আমরা বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।’ এখানে (যদি)-এর জওয়াব ঊহ্য আছে। বাক্যের বাহ্যিক গঠন এভাবে হবে, ‘তাহলে তুমি ভয়াবহ দৃশ্য দেখতে।’ কিন্তু সেখান থেকে পুনরায় ফিরে আসা সম্ভব হবে না। কাজেই তারা তাদের এই আশা পূরণ করতে পারবে না। কাফেরদের এই ধরনের আশার কথা কোরআন বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করেছে। যেমন- আল্লাহ বলেন, হে আমাদের প্রতিপালক! এ থেকে আমাদের উদ্ধার কর; আমরা যদি পুনরায় তা করি, তবে আমরা (বড়ই) জালেম গণ্য হব। আল্লাহ বলবেন, তোমরা ধিক্কৃত অবস্থায় এখানেই পড়ে থাক এবং আমার সঙ্গে কোনো কথা বলো না।’ (সুরা মুমিনূন : ১০৭-১০৮)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা দেখলাম ও শুনলাম। এখন আমাদের ফেরত পাঠিয়ে দিন, আমরা সৎকর্ম করব। আমরা দৃঢ় বিশ্বাসী হয়েছি।’ (সুরা সাজদাহ : ১২)।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

মৃত্যুর পর মানুষের নয় আফসোস

আপডেট সময় : ০৪:১৬:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা মানুষের হেদায়াতের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা রেখেছেন। রেখেছেন সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার উপায় ও উপকরণ। শান্তি ও কামিয়াবির পথের পথিক হয়ে জীবনযাপন করার জন্য পবিত্র কোরআনে রয়েছে বিশদ বর্ণনা। সফল ব্যক্তিদের পরিচিতি ও তাদের শান্তিময় জীবন উপভোগের যেমন বর্ণনা আছে কোরআনে তেমনি দুনিয়া ও আখেরাতে ব্যর্থ ব্যক্তিদের বর্ণনাও আছে। আজকের আলোচনায় আল্লাহর বান্দা হিসেবে ব্যর্থ ব্যক্তিদের কোরআনে বর্ণিত ৯টি আফসোস নিয়ে কথা বলব। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে এ আফসোসের জিন্দেগি থেকে মুক্তি দান করুন- আমিন। ৯টি আফসোস কী? কারা এই হতভাগা! তাদের পরিচয় ও হতাশাসূচক বাক্যগুলো নিচে পেশ করা হলো-

০১. ‘হায়! আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম।’ (সুরা নাবা : ৪০)।

নিশ্চয় আমি তোমাদের আসন্ন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করলাম; [১] সেদিন (হাশরে) মানুষ তার কৃতকর্ম প্রত্যক্ষ করবে [২] এবং অবিশ্বাসী বলবে, হায় আফসোস! যদি আমি মাটি হয়ে যেতাম। [৩] [১] অর্থাৎ, কেয়ামতের দিবসের আজাব সম্পর্কে এ কথা, যা অতি নিকটেই। কেন না, তার আগমন সুনিশ্চিত সত্য। আর প্রতিটি জিনিস যা আসবে তা অতি নিকটেই। যেহেতু যে কোন প্রকারে তা আসবেই আসবে। [২] অর্থাৎ, ভালো ও মন্দ যে আমলই সে পার্থিব জীবনে করেছে, তা আল্লাহর কাছে পৌঁছে গেছে। কেয়ামতের দিন তা তার সামনে এসে যাবে এবং সে তা স্বচক্ষে দেখতে পাবে। ‘তারা তাদের কৃতকর্ম সম্মুখে উপস্থিত পাবে।’ (সুরা কাহ্ফ : ৪৯)। সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে যে, সে কী সামনে (আখেরাতের জন্য) পাঠিয়েছে ও কী পেছনে (দুনিয়ায়) রেখে গেছে।’ (সুরা ক্বিয়ামাহ : ১৩) [৩] অর্থাৎ, যখন সে নিজের ভয়ঙ্কর আজাব দেখে নেবে, তখন সে এই আকাঙ্ক্ষা করবে। কোনো কোনো আলেম বলেন, আল্লাহতায়ালা পশুদের মাঝেও ন্যায়পরায়ণতা ও সুবিচারের সঙ্গে ফায়সালা করবেন। এমনকি যদি কোন শিংবিশিষ্ট পশু কোনো শিংবিহীন পশুর প্রতি অত্যাচার করে থাকে, তাহলে তারও বদলা দেওয়া হবে। তারপর আল্লাহ পশুদের বলবেন, তোমরা মাটিতে পরিণত হও। তখন তারা মাটি হয়ে যাবে। আর সেই সময় কাফেররাও বাসনা করবে যে, তারাও যদি পশু হতো এবং তাদের মত আজ মাটি হয়ে যেতে পারত! (তাফসির ইবনে কাসির)।

০২ ‘হায়! যদি পরকালের জন্য কিছু করতাম।’ (সুরা ফাজর : ২৪)।

সে বলবে, ‘হায়! আমার এ জীবনের জন্য আমি যদি কিছু অগ্রিম পাঠাতাম!’ এই বলে আফসোস ও আক্ষেপ করা লজ্জা ও লাঞ্ছনারই অংশবিশেষ। কিন্তু সেদিন তা কোনো উপকারে আসবে না।

০৩ ‘হায়! আমাকে যদি আমার আমলনামা না দেওয়া। হতো।’ (সুরা আল-হাক্কা : ২৫)।

কিন্তু যার আমলনামা তার বাম হাতে দেওয়া হবে, সে বলবে, ‘হায়! আমাকে যদি দেওয়াই না হত আমার আমলনামা। কেন না, আমল-নামা বাম হাতে পাওয়াই হবে দুর্ভাগ্যের লক্ষণ। বদকার, পাপিষ্ঠ লোক কেয়ামতের দিন বামহাতে আমলনামা পাবে। তখন তারা আফসোস করে এ কথা বলবে, ‘হায়! আমাকে যদি আমার আমলনামা না দেওয়া। হতো।’ (সুরা আল-হাক্কা : ২৫)।

০৪ ‘হায়! আমি যদি ওকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম।’ (সুরা ফুরকান : ২৮)।

হায় দুর্ভোগ আমার! আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। এখান হতে জানা যায় যে, যারা আল্লাহর অবাধ্য তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব রাখা ঠিক নয়। কারণ, মানুষ সৎ সঙ্গে ভালো ও অসৎ সঙ্গে খারাপ হয়ে যায়। বেশির ভাগ লোকদের পথভ্রষ্ট হওয়ার কারণ অসৎ বন্ধু ও খারাপ সংগীদের সঙ্গে উঠা বসা। সেই জন্য হাদিসে সৎ সঙ্গী গ্রহণ এবং অসৎ সঙ্গী বর্জন করার ব্যাপারকে (আতর-ওয়ালা ও কামারের সঙ্গে) উদাহরণ দিয়ে স্পষ্ট করা হয়েছে। (মুসলিম শরিফ : নেকি ও জ্ঞাতি বন্ধন অধ্যায়)।

০৫ ‘হায়! আমরা যদি আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর আনুগত্য করতাম।’ (সুরা আহযাব, আয়াত : ৬৬)।

যেদিন অগ্নিতে ওদের মুখমন্ডল উল্টেপাল্টে দগ্ধ করা হবে, সেদিন ওরা বলবে, ‘হায়! আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম ও রাসুলকে মান্য করতাম!’ কেয়ামতের দিন এ কথা সেসব লোক বলবে, যারা কোরআন ও সুন্নাহ ছেড়ে অন্য পথ বা মত আঁকড়ে ধরে জীবন যাপন করেছে দুনিয়ার বুকে। যারা আল্লাহর রাসুল (সা.) কে যথার্থভাবে অনুসরণ করতে পারেনি এবং আল্লাহর বিধান অমান্য করে তুচ্ছ স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দুনিয়ার হায়াত কাটিয়েছে জীবন ও মরণের রহস্য ভুলে।

০৬ ‘হায়! আমি যদি রাসুল (সা.) এর পথ অবলম্বন করতাম।’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ২৭)।

সীমালংঘনকারী সেদিন নিজ হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, ‘হায়! আমি যদি রাসুলের সঙ্গে সৎপথ অবলম্বন করতাম। অর্থাৎ দুনিয়া ও আখেরাতে প্রকৃত শান্তির পথ মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রদর্শিত পথ- এ পথ ছেড়ে যারা নিজের খেয়ালখুশি মতো চলে মৃত্যুবরণ করবে, তারা আখেরাতে আফসোস করবে। কেন রাসুল (সা.) কে অনুসরণ করল না! তাহলে তো আজ আর লাঞ্ছিত হত না।

০৭ ‘হায়! আমিও যদি তাদের সঙ্গে থাকতাম, তা হলে বিরাট সফলতা লাভ করতে পারতাম।’ (সুরা আন-নিসা: ৭৩)।

আর যদি তোমাদের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ হয়, তাহলে সে অবশ্যই বলবে, ‘হায়! যদি আমি তাদের সঙ্গে থাকতাম, তাহলে আমিও বিরাট সাফল্য লাভ করতাম।’ যেন তোমাদের ও তার মধ্যে কোনো সদ্ভাবই ছিল না। অর্থাৎ, জিহাদে বিজয় এবং গনীমতের মালের অংশ পাওয়া যেত, যা দুনিয়াদার মানুষের মূল লক্ষ্য। অর্থাৎ, যেন সে তোমাদের ধর্মাবলম্বিদের কেউ নয়; বরং সে যেন অপরিচিত পর কেউ।

০৮ ‘হায়! আমি যদি আমার রবের সঙ্গে কাউকে শরিক না করতাম।’ (সুরা কাহফ, আয়াত : ৪২)।

তার ফল-সম্পদ পরিবেষ্টিত হয়ে গেল এবং সে তাতে যা ব্যয় করেছিল, তার জন্য হাত কচলিয়ে আক্ষেপ করতে লাগল; যখন তা মাচানসহ পড়ে গেল। সে বলতে লাগল, ‘হায়! আমি যদি কাউকেও আমার প্রতিপালকের শরিক না করতাম।’ এটা হলো ধ্বংস ও বিনাশেরই আভাস। অর্থাৎ, তার পুরো বাগানটাই ধ্বংস করে দেওয়া হলো। বাগান প্রস্তুত ও সংস্কারের কাজে এবং চাষাবাদে যে অর্থ সে ব্যয় করেছিল, তার জন্য আক্ষেপের হাত কচলাতে লাগল। হাত কচলানোর অর্থ, অনুতপ্ত হওয়া।

অর্থাৎ, যে মাচান ও ছাদণ্ডছপ্পরের ওপর আঙুরের লতা রাখা ছিল, সেগুলো সব জমিনে পড়ে গেল এবং আঙুরের সব ফসল ধ্বংস হয়ে গেল। এখন সে অনুভব করতে পেরেছে যে, আল্লাহর সাথে কাউকে অংশী স্থাপন করা, তার যাবতীয় নেয়ামত দ্বারা প্রতিপালিত ও উপকৃত হয়ে তার বিধি-বিধানকে অস্বীকার করা ও তার অবাধ্যতা করা কোনোভাবেই কোনো মানুষের জন্য উচিত নয়। তবে এখন আক্ষেপ ও অনুতাপ কোনো ফল দেবে না। ধ্বংসের পর আফসোস করলে আর কী হবে?

০৯. ‘হায়! এমন যদি কোনো সুরত হতো- আমাদের আবার দুনিয়াতে পাঠানো হতো, আমরা আমাদের প্রভুকে মিথ্যা প্রতিপন্ন না করতাম আর আমরা হতাম ঈমানদারদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ২৭)।

তুমি যদি দেখতে পেতে যখন তাদের দোজখের পাশে দাঁড় করানো হবে এবং তারা বলবে, ‘হায়! যদি আমাদের (পৃথিবীতে) প্রত্যাবর্তন ঘটত, তাহলে আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনকে মিথ্যা বলতাম না এবং আমরা বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।’ এখানে (যদি)-এর জওয়াব ঊহ্য আছে। বাক্যের বাহ্যিক গঠন এভাবে হবে, ‘তাহলে তুমি ভয়াবহ দৃশ্য দেখতে।’ কিন্তু সেখান থেকে পুনরায় ফিরে আসা সম্ভব হবে না। কাজেই তারা তাদের এই আশা পূরণ করতে পারবে না। কাফেরদের এই ধরনের আশার কথা কোরআন বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করেছে। যেমন- আল্লাহ বলেন, হে আমাদের প্রতিপালক! এ থেকে আমাদের উদ্ধার কর; আমরা যদি পুনরায় তা করি, তবে আমরা (বড়ই) জালেম গণ্য হব। আল্লাহ বলবেন, তোমরা ধিক্কৃত অবস্থায় এখানেই পড়ে থাক এবং আমার সঙ্গে কোনো কথা বলো না।’ (সুরা মুমিনূন : ১০৭-১০৮)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা দেখলাম ও শুনলাম। এখন আমাদের ফেরত পাঠিয়ে দিন, আমরা সৎকর্ম করব। আমরা দৃঢ় বিশ্বাসী হয়েছি।’ (সুরা সাজদাহ : ১২)।